দেশের উন্নয়নে বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানোর বিকল্প নেই। আর বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানোকে উৎসাহিত করাসহ হুন্ডি প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধিতে মিডিয়া পালন করতে পারে ব্যাপক ভূমিকা। আন্তর্জাতিক ফিনটেক কোম্পানি ও রেমিট্যান্স অ্যাপ “না’লা’’ আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন এ কথা বলেন।
বুধবার বন্দরনগরী চট্টগ্রামের লালখানবাজার এলাকার কপার চিমনি রেস্টুরেন্টে রেমিট্যান্স বৃদ্ধিতে মিডিয়ার ভূমিকা’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন এসব কথা বলেন। এতে মূলপ্রবন্ধ পাঠ করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন না’লা বাংলাদেশ-এর হেড অব গ্রোথ মাহমুদুল হাসান মণি, এনটিভি র সিনিয়র রিপোর্টার আরিচ আহমেদ শাহ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, প্রবাসী আয়ের বড় একটি অংশ এখনো হুন্ডির মাধ্যমে দেশে আসছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। হুন্ডি ও দুর্নীতি রোধে সকলকে বৈধ পথে রেমিটেন্স পাঠাতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা দীর্ঘ ১৬-১৭ বছর ধরে অন্যায়, দুর্নীতি ও অসত্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। অনেকেই জীবন দিয়েছেন। এই অবস্থায় এসে যদি এখনো হুন্ডি ব্যবসায়ীরা আমাদের প্রবাসী আয়ের সিংহভাগ নিয়ন্ত্রণ করে, তবে তা অত্যন্ত দুঃখজনক।
মেয়র আরো বলেন, বিদেশে অবস্থানরত অনেক প্রবাসী শ্রমিক দ্রুত অর্থ প্রেরণের সুবিধার জন্য হুন্ডির পথ বেছে নেন। অথচ বৈধ পথে অর্থ পাঠালে সরকার থেকে অতিরিক্ত ইনসেন্টিভ মেলে, যা হুন্ডির চেয়ে লাভজনক। কিন্তু এ বিষয়টি যথাযথভাবে প্রবাসীদের বোঝানো যাচ্ছে না। এজন্য গণমাধ্যমকে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানান। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশে প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক কাজ করছেন। কিন্তু দিন দিন বাংলাদেশি শ্রমিকের সংখ্যা কমছে, আর শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও ভারতের শ্রমিকরা তাদের জায়গা দখল করছে। আমাদের দূতাবাস ও হাইকমিশনগুলো যদি শ্রমিকদের সমস্যাগুলো ঠিকভাবে খতিয়ে দেখত, তবে রেমিটেন্স প্রবাহ কমত না।
তিনি আরও বলেন, দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে দেশে ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার বৃদ্ধি করতে হবে। বিশেষ করে নার্সিং ও হেলথকেয়ার সেক্টরে বিপুল চাহিদা রয়েছে। আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ দিয়ে নার্স ও হেলথকেয়ার অ্যাসিস্ট্যান্ট তৈরি করা গেলে কানাডাসহ উন্নত দেশে তাদের সহজে কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে।
মেয়র আরো বলেন, রেমিটেন্স প্রবাহ বৃদ্ধির জন্য শুধু অর্থনৈতিক উদ্যোগ নয়, নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধও জরুরি। রাষ্ট্রীয়ভাবে হুন্ডি ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। একইসাথে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে আরও গতিশীল ও সক্রিয় হতে হবে। তাহলেই দেশ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে না’লা বাংলাদেশ-এর হেড অব গ্রোথ মাহমুদুল হাসান মণি বলেন, মিডিয়া হলো জনসচেতনতা সৃষ্টির অন্যতম প্রধান হাতিয়ার। বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠালে শুধু প্রবাসীর পরিবারই নয়, গোটা দেশ উপকৃত হয়। ব্যাংকিং চ্যানেল বা অনুমোদিত মানি ট্রান্সফার সার্ভিস ব্যবহার করলে নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়, দ্রুত অর্থ পৌঁছে যায় এবং খরচও কম হয়। সাংবাদিকরা এই বার্তাগুলো মানুষের কাছে খুব সহজেই পৌঁছে দিতে পারে। বিভিন্ন প্রচারণা, সফলতার গল্প এবং তুলনামূলক বিশ্লেষণের মাধ্যমে মানুষকে বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে উদ্বুদ্ধ করলে মূলত দেশেরই লাভ।
মূলপ্রবন্ধে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি হলো প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। প্রতিবছর কোটি কোটি ডলার দেশের অর্থনীতিতে যুক্ত হয় এই রেমিট্যান্সের মাধ্যমে। এটি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি পরিবার ও সমাজের আর্থসামাজিক উন্নয়নেও বিশেষ ভূমিকা রাখে। তবে এ প্রবাহ বাড়াতে প্রবাসীদের সচেতনতা, আস্থা এবং ইতিবাচক আচরণ গড়ে তোলা জরুরি। আর এখানেই মিডিয়ার ভূমিকাই হয়ে ওঠে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
“না’লা”র পক্ষ থেকে জানানো হয়, বর্তমানে না’লা অ্যাপ ব্যবহার করে প্রবাসীরা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশ মিলিয়ে মোট ২১টি দেশ থেকে বাংলাদেশে টাকা পাঠাতে পারেন। ২০২১ সালে চালু হওয়া অ্যাপটির ব্যবহারকারীর সংখ্যা বর্তমানে ৫ লাখেরও বেশি। মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন মিডিয়ার প্রতিনিধিরা অংশ নেন।