দেশে প্রথমবারের মতো ‘ব্যাট রিওভাইরাস’ শনাক্ত করেছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, পাঁচজন রোগীর নমুনায় এই ভাইরাস পাওয়া গেছে। তার সবাই ঢাকার বাসিন্দা। তারা চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। নতুন করে তাদের শরীরে কোনো জটিলতায় নেই।
শুক্রবার (১০ জানুয়ারী) আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরিন বলেন, সম্প্রতি নিপাহ ভাইরাসের মতো উপসর্গ দেখানো ৪৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে পাঁচজনের শরীরে ব্যাট রিওভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, নতুন জীবাণু নিয়ে আইইডিসিআরের নিয়মিত গবেষণার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে এই নমুনাগুলো পরীক্ষা করা হয়। এই ভাইরাসের প্রকৃতি অনেকটা করোনাভাইরাসের মতো। তবে এই ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু নেই। এই ভাইরাস সাধারণত কাশি ও হাঁচির মাধ্যমে ছড়ায়। এর উপসর্গের মধ্যে শ্বাসকষ্ট, জ্বর, মাথাব্যথা, বমি এবং ডায়রিয়া অন্তর্ভুক্ত। গুরুতর ক্ষেত্রে এটি নিউমোনিয়া বা এনসেফালাইটিস (মস্তিষ্কে প্রদাহ) সৃষ্টি করতে পারে। শিশু এবং বয়স্করা এই ভাইরাসে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
প্রতিষ্ঠানটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, রিওভাইরাসের সাধারণত ৯টি ধরণ হয়। এর মধ্যে ৪টি ধরণ মানবদেহে পাওয়া যায়। আর বাকিগুলো অস্তিত্ব এখন পর্যন্ত মানবদেহে পাওয়া যায়নি। আর এই রিওভাইরাসেরই একটি ধরণ ব্যাট-রিওভাইরাস, যা বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো পাওয়া গেছে। এই ভাইরাসের উপস্থিতি সাধারণত বাদুড়ে পাওয়া যায়।
দেশে নতুন ভাইরাস শনাক্ত: লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায়
বিশ্বে প্রথম রিওভাইরাস (রেসপিরেটরি এন্টারিক অরফান ভাইরাস) শনাক্ত হয় ১৯৫০ সালে। তবে দেশে এই প্রথম পাঁচজনের শরীরে রিওভাইরাস শনাক্ত করেছে ইনস্টিটিউট অব এপিডেমিওলোজি ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ (আইইডিসিআর)। তবে কারও ক্ষেত্রে তেমন কোনো জটিলতা দেখা যায়নি।
রিওভাইরাস এমন একটি ভাইরাস, যা সাধারণত প্রাণী বা মানুষের মধ্যে অন্ত্রের সংক্রমণ সৃষ্টি করতে পারে। শীতকালে রিওভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। পানির মাধ্যমে ছড়াতে পারে এই ভাইরাস; যা শিশুদের ডায়রিয়া বা জ্বরের সৃষ্টি করে। ভাইরাসটি শরীরে প্রবেশের ৩-৬ দিনের মধ্যেই উপসর্গ দেখা দেয়। তবে এ ভাইরাস তুলনামূলকভাবে কম ভয়াবহ ও সাধারণত সহজেই চিকিৎসা করা যায়।
যেসব লক্ষণে চেনা যাবে রিওভাইরাস
ডায়রিয়া: পানিজাতীয় পাতলা মল, যা শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
জ্বর: শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়।
বমি: বমি করা, বিশেষ করে খাবার খাওয়ার পর।
পেটে ব্যথা: অন্ত্রের অস্বস্তি বা পেটের ব্যথা।
শক্তি কমে যাওয়া: শরীর দুর্বল অনুভূতি বা ক্লান্তি।
কতটা মারাত্মক?
রিওভাইরাস সাধারণত মারাত্মক নয়। তবে এটি গুরুতর ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে। সেক্ষেত্রে সঠিক চিকিৎসা না পেলে এটি জীবনহানির কারণ হতে পারে। তবে এটি সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিলে ভালোভাবে নিরাময়যোগ্য।
এ ভাইরাস সংক্রমণ কারও কারও ক্ষেত্রে মারাত্মক হতে পারে। সেক্ষেত্রে নিউমোনিয়া, এমনিক এনকেফালাইটিস বা মস্তিষ্কের প্রদাহও দেখা দিতে পারে। বেশি আক্রান্ত হয় শিশু ও বয়স্করা।
প্রতিরোধের উপায় কী?
রিওভাইরাস প্রতিরোধের জন্য টিকা (রিওভাইরাস ভ্যাকসিন) আছে, যা শিশুদের জন্য দেয়া যেতে পারে। এ ছাড়া হাত ধোয়া, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, মাস্ক ব্যবহার ও খাবারের সুরক্ষা এ ভাইরাসের সংক্রমণ কমাতে সহায়ক।