চট্টগ্রাম মহানগরের চেরাগি পাহাড় মোড় ও মোমিন রোড় এলাকায় কোটা বিরোধী আন্দোলকারীদের একাংশের সাথে পুলিশের ধাক্কাধাক্কি, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া এবং সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার শেল নিক্ষেপের কারণে আন্দোলনকারীদের একাংশের বিক্ষোভ কর্মসূচী পণ্ড হয়ে যায়। এতে পুলিশসহ কমপক্ষে আহত হয়েছেন ৫জন। ঘটনাস্থল থেকে জামাত শিবির সন্দেহে ২০ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
সোমবার (২৯ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে নগরীর জামাল খান ও চেরাগী মোড়ে এ ঘটনা ঘটে।
দেখা যায়, সোমবার বেলা ৩টার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা প্রেসক্লাবের সামনে পূর্বঘোষিত বিক্ষোভ সমাবেশে আসার আগেই সেখানে সতর্ক অবস্থান নেন আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা। সমাবেশস্থলে আসতে না পেরে চেরাগি মোড়ে খণ্ড খণ্ডভাবে এসে জড়ো হন আন্দোলনকারীরা। এর কিছুক্ষণ পরেই চেরাগি মোড়ের অন্যপাশে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরাও অবস্থান নেন। সেখানে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমনকেও দেখা যায়। এ সময় ছাত্রলীগও যুবলীগ কর্মীরা জামাত শিবির বিএনপির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করতে থাকে। আন্দোলনকারীরাও বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে তাদের হাতাহাতি-তর্কাতর্কি হয়। এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীরা কদম মোবারক মসজিদের সমানে গিয়ে রাস্তায় বসে বিক্ষোভ করতে থাকলে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে তাদের সরিয়ে দেয়। সেখান থেকে ২০জনকে আটক করে পুলিশ।
এদিকে, আটক শিক্ষার্থীদের ছাড়াতে আন্দোলনকারীরা পুলিশের প্রিজনভ্যান আটকানোর চেষ্টা করেন। এ সময় পুলিশের সঙ্গে আবারও হাতাহাতি-তর্কাতর্কি হয়। পরে তারা সড়কে বসে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল ছুঁড়ে পুলিশ। পরে পুলিশের ধাওয়া খেয়ে জেএমসেন হল হয়ে কুসুমকুমারী স্কুলের সামনে দিয়ে চলে যান আন্দোলনকারীরা।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার (এডিসি) কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, নগরের জামালখান ও চেরাগী মোড় থেকে কোতোয়ালী থানা পুলিশ ১৬ জনকে আটক করেছে। আমাদের এসি কোতোয়ালীসহ ৪ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় থানায় মামলা করা হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের জামাল খান ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন চট্টগ্রাম২৪ নিউজকে বলেন, আজকে (সোমবার) যারা বিক্ষোভের নামের নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করেছে। তারা আসলে কেউ শিক্ষার্থী ছিলেন না। তারা সবাই বিএনপি, জামাত-শিবির ও কিছু বাম রাজনীতির সাথে যুক্ত কর্মী। জনগণের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে যেকোনো ধরনের নৈরাজ্য প্রতিহত করতে ছাত্রলীগ-যুবলীগসহ আমরা সবাই সজাগ রয়েছি বলে জানান তিনি।
অবশ্য কোটা আন্দোলনকারীদের একাংশের পূর্বঘোষিত এ বিক্ষোভ কর্মসূচীকে ঘিরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে সোমবার সকাল থেকেই সতর্কতামূলক অবস্থান নেন পুলিশ। সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রায় অর্ধশতাধিক পুলিশ সদস্য প্রেসক্লাবের পাশে সড়কের ওপর অবস্থান নিয়েছেন। এছাড়া নগরের বহদ্দারহাট, ষোলশহর, আগ্রাবাদ, নিউমার্কেট সহ বিভিন্ন এলাকার নিরাপত্তায় বাড়ানো হয়েছে পুলিশের টহল। রাস্তায় চলে তল্লাশি।
এ সময় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম জানান, চট্টগ্রামে ১৫ ঘণ্টার জন্য কারফিউ শিথিল রাখা হয়েছে। এ সময় কোনো সভা সমাবেশ করার অনুমতি নেই। যদি কেউ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাবে সিএমপি।