আজ পবিত্র ঈদ-উল-আযহা

৩,০৪৫

মুসলমানদের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদ-উল-আযহা আজ বুধবার। করোনাভাইরাস ঝুঁকির মধ্যে দেশজুড়ে আজ উদযাপন করা হবে মুসলিম উম্মাহর বৃহৎ এ ধর্মীয় উৎসব।

এদিকে করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে ঈদুল ফিতরের মতো ঈদ-উল-আযহায় বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। করোনা সংক্রমণ রোধে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ঈদের জামাত শেষে কোলাকুলি এবং হাত মেলানো থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসী এবং সারাবিশ্বের মুসলমানদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। পৃথক বাণীতে তারা মুসলিম উম্মাহর অব্যাহত শান্তি, সমৃদ্ধি ও মঙ্গল কামনা করেছেন।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বাণীতে বলেন, ‘মহান আল্লাহর প্রতি গভীর আনুগত্য ও সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর পবিত্র ঈদুল আজহা। ‘আজহা’ অর্থ কোরবানি বা উৎসর্গ করা। ঈদুল আজহা উৎসবের সঙ্গে মিশে আছে চরম ত্যাগ ও প্রভুপ্রেমের পরাকাষ্ঠা।’

তিনি বলেন, ‘মহান আল্লাহর নির্দেশে স্বীয় পুত্র হযরত ইসমাইল (আঃ) কে কোরবানি করতে উদ্যত হয়ে হযরত ইব্রাহিম (আঃ) আল্লাহর প্রতি অগাধ ভালোবাসা, অবিচল আনুগত্য ও অসীম আত্মত্যাগের যে সুমহান দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা ইতিহাসে অতুলনীয়।’

কঠিন এ সময়ে দেশের আপামর জনগণের প্রতি কোরবানির মর্মার্থ অনুধাবন করে সংযম ও ত্যাগের মানসিকতায় উজ্জীবিত হয়ে মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি।

ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘শান্তি সহমর্মিতা, ত্যাগ ও ভ্রাতৃত্ববোধের শিক্ষা দেয় ঈদুল আজহা। আমরা সবাই পবিত্র ঈদুল আজহার মর্মবাণী অন্তরে ধারণ করে নিজ নিজ অবস্থান থেকে জনকল্যাণমুখী কাজে অংশ নিয়ে বৈষম্যহীন, সুখী, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ে তুলি।’

ঈদ-উল-আযহা এই দিনে তিনি মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ ও মুসলিম উম্মাহর উত্তরোত্তর উন্নতি, সমৃদ্ধি ও অব্যাহত শান্তি কামনা করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এক সংকটময় সময়ে ঈদুল আজহা উদযাপন করছি। করোনাভাইরাস সমগ্র বিশ্বকে স্থবির করে দিয়েছে। সরকার পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে। জনগণকে সব সহযোগিতা প্রদান অব্যাহত রাখছে।’

বন্দরনগরী চট্টগ্রামে পবিত্র ঈদ-উল-আযহার প্রথম ও প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে নগরীর দামপাড়া জমিয়তুল ফালাহ মসজিদে সকাল ৭টায়। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনায় একই স্থানে দ্বিতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৮টায়। প্রধান জামাতে ইমামতি করবেন মসজিদের খতিব সৈয়দ আবু তালেব মোহাম্মদ আলাউদ্দীন আল কাদেরী। দ্বিতীয় জামাতে ইমামতি করবেন পেশ ইমাম মাওলানা নূর মুহাম্মদ সিদ্দিকী।

এছাড়া চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন লালদীঘি শাহী জামে মসজিদে ঈদ জামায়াত অনুষ্ঠিত হবে সকাল সাড়ে ৭টায়। সকাল সাড়ে ৭টায় সুগন্ধা আবাসিক এলাকা জামে মসজিদ, আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, বায়তুশ শরফ জামে মসজিদ, মক্কী মসজিদ, বহদ্দারহাট জামে মসজিদ, হালিশহর জামে মসজিদ, আগ্রাবাদ সিজিএস কলোনী মসজিদ, বন্দরটিলা আলীশাহ মসজিদ, ফিরিঙ্গিবাজার জামে মসজিদ, এনায়েত বাজার শাহী জামে মসজিদ, সুগন্ধা আবাসিক এলাকা জামে মসজিদ, চকবাজার সিটি করপোরেশন জামে মসজিদ ও চসিক মা আয়েশা সিদ্দিকা জামে মসজিদে (সাগরিকা জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়াম সংলগ্ন) ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে।

এছাড়াও যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে নগরের ৪১টি ওয়ার্ডে ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের তত্ত্বাবধানে ১টি করে প্রধান ঈদ জামাত পরিস্থিতি বিবেচনা সাপেক্ষে মসজিদ বা ঈদগাহে অনুষ্ঠিত হবে।

ঈদের জামাত আদায়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ১২ নির্দেশনা
১) করোনা সংক্রমণের স্থানীয় পরিস্থিতি ও মুসল্লিদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনা করে স্থানীয় প্রশাসন কর্তৃক জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে আলোচনা ও সমন্বয় করে ঈদুল আজহার জামাত মসজিদ নাকি ঈদগাহে বা খোলা জায়গায় হবে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ঈদের নামাজ আদায়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ কর্তৃক জারি করা স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে।

২) মসজিদে ঈদের নামাজ আয়োজনের ক্ষেত্রে কার্পেট বিছানো যাবে না। নামাজের আগে সম্পূর্ণ মসজিদ জীবাণুনাশক দ্বারা জীবাণুমুক্ত করতে হবে। মুসল্লিরা প্রত্যেকে নিজ নিজ দায়িত্বে জায়নামাজ নিয়ে আসবেন।

৩) প্রত্যেককে নিজ নিজ বাসা থেকে ওজু করে মসজিদ/ঈদগাহে আসতে হবে। ওজু করার সময় কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড সাবান-পানি দিয়ে হাত ধুতে হবে।

৪) করোনাভাইরাস সংক্রমণরোধে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকল্পে মসজিদ ও ঈদগাহে ওজুর স্থানে সাবান, পানি ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে।

৫) মসজিদ/ঈদগাহ মাঠের প্রবেশদ্বারে হ্যান্ড স্যানিটাইজার/ হাত ধোয়ার ব্যবস্থাসহ সাবান ও পানি রাখতে হবে।

৬) ঈদের নামাজের জামাতে আগত প্রত্যেক মুসল্লিকে অবশ্যই মাস্ক পরে আসতে হবে। মসজিদে সংরক্ষিত জায়নামাজ ও টুপি ব্যবহার করা যাবে না।

৭) ঈদের নামাজ আদায়ের সময় কাতারে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে। এক কাতার অন্তর অন্তর কাতার করতে হবে।

৮) শিশু, বৃদ্ধ, অসুস্থ ব্যক্তি এবং অসুস্থদের সেবায় নিয়োজিতদের ঈদের নামাজের জামাতে অংশগ্রহণে নিরুৎসাহিত করা হলো।

৯) সর্বসাধারণের সুরক্ষা নিশ্চিতে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, স্থানীয় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্দেশনা অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে।

১০) ঈদের জামাত শেষে কোলাকুলি এবং পরস্পর হাত মেলানো পরিহার করতে হবে।

১১) করোনা মহামারির এ বৈশ্বিক মহাবিপদ থেকে রক্ষা পেতে বেশি বেশি তওবা, আস্তাগফিরুল্লাহ ও কুরআন তিলাওয়াত করতে হবে এবং ঈদের নামাজ শেষে মহান আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে।

১২) খতিব, ইমাম, মসজিদ/ঈদগাহ পরিচালনা কমিটি ও স্থানীয় প্রশাসন কর্তৃক নির্দেশনাগুলোর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।

এসব নির্দেশনা না মানলে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সংশ্লিষ্ট মসজিদের পরিচালনা কমিটিকে নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়ন করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.