বাঁশখালীর আলোচিত সাবেক এমপি মোস্তাফিজুরকে দুদকে তলব

চট্টগ্রাম-১৬ আসনের (বাঁশখালী) আলোচিত সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে তার তলবি চিঠি চট্টগ্রামের বাসার ঠিকানায় সম্প্রতি পাঠানো হয়েছে। যেখানে তাকে আগামী ২৭ অক্টোবর হাজির হয়ে বক্তব্য প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। দুদক উপপরিচালক মুর্তুজা আল মহামুদ সই করা চিঠির সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এর আগে, গত ১৫ অক্টোবর মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী ও তার স্ত্রী শাহীন আক্তার চৌধুরীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।  গত ১৮ সেপ্টেম্বর সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমানের দুর্নীতি অনুসন্ধানে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

কমিশন থেকে সিদ্ধান্তেরর পর দুদক উপপরিচালক মুর্তুজা-আল-মাহমুদের নেতৃত্বে একটি তিন সদস্যের অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে। টিমের অপর সদস্যরা হলেন- সহকারী পরিচালক মো. ফয়সাল কাদের ও উপসহকারী পরিচালক মো. আবদুল্লাহ আল মামুন।

অনুসন্ধান কাজ শুরু হওয়ার পর এরই মধ্যে চলতি সপ্তাহে ১৫৪ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন নথিপত্র তলব করে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। যার মধ্যে জাতীয় সংসদ, বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিস, ভূমি অফিস, সাব-রেজিস্ট্রার অফিস, রাজউক, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনসহ ৩০টি প্রতিষ্ঠান, ৭৯টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ৪৫টি ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি রয়েছে। কিছু কিছু নথিপত্র আসা শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।

অভিযোগসূত্রে জানা যায়, মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামা অনুযায়ী তার বার্ষিক আয় ছিল ১৫ হাজার টাকা, যা ২০২৪ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ লাখ ৬৮ হাজার ৪৬৫ টাকা। সাবেক এই এমপির নিজ নামে একটি টয়োটা প্রাডো জিপ, যার মূল্য ৩৭ লাখ ২০ হাজার ও একটি টয়োটা ল্যান্ড ক্রজার স্টেশন ওয়াগন, যার মূল্য ৮৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।

সূত্র জানায়, তার পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত চার একর জমি, নিজ নামে বরাদ্দকৃত রাজউকের তিন কাঠার প্লট, ১৪ গন্ডা অকৃষি জমি, চার কাঠার প্লট ও চকবাজার সুপার মার্কেটে দোকান রয়েছে। স্ত্রীর নামে পাঁচতলা বিশিষ্ট বাড়ি ও ঢাকার কাফরুলে ১৮৭২ বর্গফুটের ফ্ল্যাট রয়েছে।

প্রসঙ্গত; সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী আওয়ামী লীগের টিকিটে বিনা ভোটে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর দুর্নীতি-লুটপাটের মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হয়ে যান। দিনে দিনে হয়ে ওঠেন ভয়ংকর। সরকারি প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা লুটপাট করেন। এভাবে ১০ বছরের ব্যবধানে তার সম্পদের পরিমাণ বাড়ে ১৪ গুণ। লুটপাটের পাশাপাশি এলাকায় কায়েম করেন ত্রাসের রাজত্ব। ভিন্নমত দমনে প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে মিছিলে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তা, সাংবাদিক পুলিশ পিটিয়ে বারবার হয়েছেন সংবাদ শিরোনাম। তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশিত হলেই সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ঠুকে দিতেন আইসিটি অ্যাক্টের মামলা। ২০১৪ সালে প্রথমবার ও ২০১৮ সালে দ্বিতীয় বার কখনো দিনের ভোট রাতে নিয়ে কখনও বিনা ভোটের এমপি হয়ে আগ্রাসী রূপে আবির্ভূত হন তিনি। দলের ভেতরে-বাইরে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়লেও তৃতীয় দফায় ২০২৪ সালেও তিনি আওয়ামী লীগের নৌকার মনোনয়ন পান। যদিও ওই নির্বাচনে তার প্রতিপক্ষ স্বতন্ত্র প্রার্থী মুজিবুর রহমান জয়ী হন। এরপর থেকে এলাকায় তাকে তেমন দেখা যায়নি। তবে ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে এক সময়ের প্রতাপশালী এই এমপি আত্মগোপনে চলে যান।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.