চবি শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ-যুবলীগের হামলার অভিযোগ
প্রক্টর বলছেন, দোকান দখল নিয়ে দুই ব্যবসায়ীর দ্বন্দ্বে সংঘর্ষ, আহত ৫
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রেলস্টেশন সংলগ্ন একটি দোকানের দখল নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সশস্ত্র হামলার অভিযোগ উঠেছে। তবে চবি প্রক্টর বলছেন, স্থানীয় দুই ব্যবসায়ীর দ্বন্দ্বে এ সংঘর্ষ হয়েছে।
সোমবার (২১ অক্টোবর) ভোররাত ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেলস্টেশন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় চবির পাঁচ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আহতরা হলেন, ইয়াসিন আরাফাত আইএমএল (২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ ) , নাজমুল হাসান আরবি বিভাগ (২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ), মোনায়েম শরীফ পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশন (২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ), আব্দুল্লাহ আল নোমান ইসলামিক স্টাডিজ (২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ) ও মুজাহিদুল ইসলাম ইসলামিক স্টাডিজ (২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ)। তাদের মধ্যে ইয়াসিন আরাফাতকে চট্টগ্রাম নগরের বেসরকারি পার্কভিউ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলে চিকিৎসা নিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে সোমবার ভোররাত ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেলস্টেশন এলাকায় নির্মাণাধীন আপ্যায়ন নামক একটি রেস্টুরেন্ট দখল করার উদ্দেশ্যে ভাঙচুর চালায় স্থানীয় যুবলীগ নেতা হানিফের অনুসারীরা। এসময় তারা কয়েক রাউন্ড গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে রেলগেট এলাকায় যায়। এসময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা যুবলীগের ওই নেতার একটি দোকান ভাঙচুর করে। শিক্ষার্থীরা রেলগেটে অবস্থান শেষে ফিরে আসার সময় স্থানীয়রা পেছন থেকে লাঠিসোঁটা ও দেশিয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এ হামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে একজনকে নগরের পার্কভিউ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী হাবিবুল্লাহ খালেদ জানান, ক্যাম্পাসে যুবলীগের সন্ত্রাসীরা বোমাবাজি করছে শুনে সকালেই আমরা জিরো পয়েন্টে আসি। পুলিশকে খবর দেওয়া হলেও রেলগেটে সন্ত্রাসীরা অবস্থান নেওয়ায় তারা আসতে পারছে না বলে শোনা যায়। পরে শিক্ষার্থীরা প্রক্টরসহ রেলগেট এলাকায় গিয়ে অবস্থান নেয়। এসময় যুবলীগের ক্যাডাররা আমাদের দিকে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোঁড়ে। পরে আমরা ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে যায়।
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ ইসহাক বলেন, ‘পুলিশ আমাদের ন্যূনতম সহযোগিতাও করেনি। এতো বিশাল ঘটনা, অথচ ওসি পুলিশ পাঠিয়েছে ৩ জন। ওই ৩ জন আবার সন্ত্রাসীদের কারণে রেলগেট থেকে আসতে পারেনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ তানভীর হায়দার আরিফ বলেন, স্থানীয় একজনের দোকানে সন্ত্রাসীরা ভাঙচুর চালালে ঘটনার সূত্রপাত হয়। ভোররাত ৪টায় সেখানে প্রচুর ককটেল ফোটানো হয়। এর প্রেক্ষিতে সকালে শিক্ষার্থীরা জড়ো হলে সন্ত্রাসীরা গুজব রটিয়ে দেয়- এলাকাবাসীর সাথে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এরপর সকালে আমরা শিক্ষার্থীসহ রেলগেট এলাকায় যাই। সেখানে স্থানীয়দের সাথে কথা হয়েছে।
তিনি বলেন, এলাকার গণ্যমান্য ৩ জন ব্যক্তি, ছাত্র প্রতিনিধি ও প্রক্টরিয়াল বডি নিয়ে একটি সভা আহবান করা হয়েছে। মিটিং থেকে একটি সমন্বয় কমিটি করা হবে, যাতে ভবিষ্যতে এমন সমস্যা হলে দ্রুত সমাধান করা যায়।
প্রসঙ্গত, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত যুবলীগ নেতা হানিফ। রেলস্টেশনে রেলওয়ের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে সবগুলো দোকানের ভাড়া নেয় হানিফ। এছাড়া তার ছোট ভাই ছাত্রলীগ নেতা মো. ইকবাল পুরো ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় ডিসের লাইন এবং ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ব্যবসা করে। অন্য কাউকে তারা এখানে ব্রডব্যান্ডের ব্যবসা করতে দেয় না। নিম্নমানের ইন্টারনেট দিয়ে দীর্ঘদিন এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিম্নমানের ইন্টারনেটের বিষয়ে অভিযোগ জানালে তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার ও হুমকির অভিযোগও আছে ইকবালের বিরুদ্ধে।
এর আগে গত ৫ আগস্ট রাতে রেলক্রসিং এলাকায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় যুবলীগ নেতা হানিফ ও তার অনুসারীরা। ওই সময় দর্শন বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ মোজাম্মেল হকের গাড়িতেও হামলা করে তারা। তাদের হামলা তখন ৩ জন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.