তেলবাহী জাহাজে আগুনে নিহত ৩, প্রাথমিক তদন্তে বিপিসির সুপারিশ

চট্টগ্রাম বন্দরের পতেঙ্গার ৭ নম্বর ডলফিন জেটিতে বার্থিং নেওয়া এমটি বাংলার জ্যোতি জাহাজে বিস্ফোরণ এবং অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে তিনজন নাবিকের ঝলসে যাওয়া ও খণ্ড–বিখণ্ড লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন, বিএসসির নিজস্ব মেরিন ওয়ার্কশপের চার্জম্যান চট্টগ্রামের নুরুল ইসলাম, ২৫ থেকে ৩০ বছর ধরে বিএসসিতে ডেইলিবেসিস কাজ করা কিশোরগঞ্জের মো. হারুন, বরিশাল মেরিন একাডেমি থেকে পাস করে বের হওয়া ঝিনাইদহের ক্যাডেট সৌরভ কুমার সাহা।

ঘটনা তদন্তে একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) গঠিত সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে প্রাথমিক রিপোর্ট দাখিল করেছে। এতে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে বিএসসিকে একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠনের পরামর্শের পাশাপাশি পুরনো জাহাজ দুটির ওপর লাইটারিংয়ের নির্ভরতা কমিয়ে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) দ্রুত কার্যকর করতে ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বিপিসি’র প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট ও সুপারিশ : বিপিসির তদন্ত কমিটি গত রাতে বিপিসি চেয়ারম্যানের নিকট যে তদন্ত প্রতিবেদন প্রদান করেছে তাতে ঘটনার ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য–উপাত্ত উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বিপিসির সাথে বিএসসির দ্বিপাক্ষিক চুক্তি, জ্বালানি তেল লাইটারিংয়ের জন্য শুধুমাত্র বিএসসির দুটি অয়েল ট্যাংকার থাকা, ১৯৮৭ সালে ডেনমার্ক থেকে কেনা ট্যাংকার দুটির অবস্থাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। একটি ট্যাংকার অচল হয়ে যাওয়া এবং অপর ট্যাংকারটির অবস্থাও ভালো না থাকার কথা উল্লেখ করে তদন্ত কমিটির সদস্যরা দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা এবং জ্বালানি তেল লাইটারিং অব্যাহত রাখার স্বার্থে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) দ্রুত কার্যকর করার পরামর্শ দিয়েছেন।

গতকাল সোমবার সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর ডলফিন জেটি এলাকায় তেলবাহী জাহাজ জ্যোতিতে আগুন ও বিস্ফোরণের দুর্ঘটনা ঘটে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, ফায়ার সার্ভিস, কোস্টগার্ড, নেভি ও বিমান বাহিনীর সদস্যরা দুপুর দেড়টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হন। বিস্ফোরণে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের (বিএসসি) মালিকানাধীন ৩৭ বছরের পুরনো জাহাজটির সামনের অংশ পুরোপুরি উড়ে গেছে। তবে ভাগ্যক্রমে জাহাজটির হ্যাজে আগুন লাগেনি। এতে করে জাহাজটিতে থাকা অন্তত ৮৫ কোটি টাকা দামের ক্রুড অয়েল রক্ষা পেয়েছে।

এদিকে কেইপিজেড ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. মামুন বলেন, ‘অধিক তাপের কারণে আজকে (সোমবার) সকালে বন্দরের ৯ নম্বর জেটিতে ক্রুড অয়েলের একটি জাহাজে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও বন্দর কর্তৃপক্ষের একাধিক টিম অগ্নিনির্বাপণে কাজ করে। আগুন নির্বাপণের পর আমরা উদ্ধার কাজ পরিচালনা করি। এতে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করেছি। জাহাজে আর কেউ ছিল না বলে আমরা জেনেছি।’

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক) সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে ফায়ার আউটব্রম্নক এমভি বাংলার জ্যোতিতে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। চবকের টাগবোট কান্ডারি ২, ৩, ৪, ৮, ১০ ও বিএন শিবশা আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। আগুনে জাহাজটির সামনের সবগুলো দড়ি পুড়ে গেছে এবং জাহাজটি জেটি থেকে আলাদা করা হয়েছে। জাহাজটি বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের (বিএসসি) মালিকানাধীন। আগুন লাগার কারণ তদন্তসাপেক্ষে জানা যাবে।

জানা যায়, দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের একমাত্র জ্বালানি তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারিতে পরিশোধনের জন্য আবুধাবির এডনক কোম্পানি থেকে কেনা প্রায় ৯৮,৩৮৩ টন মারবান ক্রুড অয়েল নিয়ে মাদার ভ্যাসেল এমটি ওমেরা লিগ্যাসি গত ১৭ সেপ্টেম্বর কুতুবদিয়ার অদূরে বহির্নোঙরে অবস্থান নেয়। ১৯ সেপ্টেম্বর ওই মাদার ভ্যাসেল থেকে ক্রুড অয়েল লাইটারিং শুরু হয়। প্রথম লাইটার হিসেবে বিএসসির মালিকানাধীন এমটি বাংলার সৌরভের মাধ্যমে ক্রুড অয়েল আনা হয়। এরপর আরো চার দফা ক্রুড অয়েল আনা হয়।

পঞ্চম লাইটারিং জাহাজ হিসেবে গতকাল প্রায় ৮৫ কোটি টাকা দামের ১১,৭১৬.৪৪৬ টন ক্রুড অয়েল নিয়ে এমটি বাংলার জ্যোতি ৭ নম্বর ডলফিন জেটিতে বার্থিং নেয়। প্রতি টন ক্রুড অয়েল ৬শ ডলার দরে আমদানি করা হয়েছে। জাহাজটি থেকে প্রায় ৮শ টন তেল খালাসের পর সকাল ১০টা ৫৪ মিনিটে আচমকা বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে জাহাজটির সামনের দিকে অবস্থিত ফোর পিক স্টোর (জাহাজের রশি, নোঙর, স্পেয়ার পার্টস রাখার স্থান) হতে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে মর্মে তদন্ত কমিটির প্রাথমিক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। বিস্ফোরণের সাথে সাথে জাহাজটিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। তদন্ত কমিটি রিপোর্টে উল্লেখ করেছে, বিস্ফোরণের তীব্রতা বিবেচনায় উক্ত স্থানে এ পরিমাণ দাহ্য পদার্থ জমা হওয়া অস্বাভাবিক।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.