বায়েজিদে দাফনের ৪০দিন পর গৃহবধুর লাশ উত্তোলন
চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদে দাফনের ৪০ দিন পর আলফা শাহরিন (২৬) নামে এক গৃহবধূর লাশ উত্তোলন করা হয়েছে। হত্যা মামলায় ময়নাতদন্তের জন্য আদালতের নির্দেশে শাহরিনের লাশ উত্তোলন করে পিবিআই।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) সকাল ১০টার দিকে নগরের বায়েজিদের চালতাতলী বাজারের মসজিদ সংলগ্ন নুরুল আমিনের পারিবারিক কবরস্থান থেকে ওই গৃহবধুর লাশ উত্তোল করা হয়। নিহত আলফা শাহরিন চালতাতলী বাজারের দারোগা বাড়ির মো. জাহেদুল মোস্তফার স্ত্রী এবং একই এলাকার নুরুল করিমের মেয়ে।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)’র সহকারী পুলিশ সুপার এ কে এম মহিউদ্দিন সেলিম জানান, তদন্তের অংশ হিসেবে ময়নাতদন্তের জন্য আজ (বৃহস্পতিবার ) কবর থেকে শাহরিনের মরদেহ তোলা হয়েছে। হত্যা বা আত্মহত্যা— কোনো তত্ত্বই উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলেই কিনারা হবে শাহরিনের মৃত্যু রহস্য।
এদিকে মামলাল এজাহার সূত্রে জানা যায়, বিয়ের পর থেকে যৌতুকের জন্য মেয়ে শাহরিনকে নির্যাতন করকো শ্বষুর বাড়ির লোকজন। মেয়ের সুখের আশায় নির্যাতনের পরও আত্মীয়-স্বজন থেকে ৯ লাখ ২১ হাজার টাকা স্বামী এবং শাশুড়িকে এনে দেন শাহরিন। কিন্তু ব্যবসায় লোকসান এবং বিভিন্নজনের টাকা আত্মসাতের মামলায় চলতি বছরের ৯ এপ্রিল গ্রেপ্তার হয়ে কারাবন্দি হন শাহরিনের স্বামী জাহেদুল। এ সময় বাবার কাছ থেকে আবারও ২০ লাখ টাকা এনে দিতে শাহরিনকে নির্যাতন শুরু করেন আসামিরা। নির্যাতনের একপর্যায়ে শাহরিন অসুস্থ হয়ে পড়ে। গত ২৭ এপ্রিল বিকেলে ‘রিকশার চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে’ শাহরিনের ফাঁস লেগেছে বলে তার বাবার (বাদী) কাছে হোয়াটসঅ্যাপে কল করেন বিবি আয়েশা (শাশুড়ি)।
খবর পেয়ে মেয়ের শ্বশুর বাড়ি পৌঁছে বেড রুমের বিছানায় মুমূর্ষ অবস্থায় মেয়েকে পড়ে থাকতে দেখেন নুরুল আমীন। এরপর মেয়েকে নগরের বেসরকারি ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড ডেন্টাল হাসপাতালে নিয়ে যান নুরুল করিম। সেখানকার চিকিৎসকদের পরামর্শে শাহরিনকে নিয়ে যাওয়া হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে। আইসিইউ খালি না থাকায় শাহরিনকে নিয়ে যাওয়া হয় নগরের বেসরকারি চট্টগ্রাম মেডিকেল সেন্টারে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২৮ এপ্রিল ভোরে আলফা শাহরিনকে মৃত ঘোষণা করে মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসকেরা। ওই দিন বেলা ২টায় বাবা নুরুল আমীনের পারিবারিক কবরস্থানে শাহরিনকে দাফন করা হয়। দাফন করার আগে মরদেহের গোসল দেওয়া এক নারী শাহরিনের শরীরে একাধিক ‘আঘাতের চিহ্ন’ দেখে বাদীকে (নুরুল করিম) জানান।
গৃহবধূর শাহরিনের শ্বশুরবাড়ির লোকজনের দাবি, ‘রিকশায় ওড়না পেঁচিয়ে শাহরনের মৃত্যু হয়েছে। এ দাবি মানতে পারেনি শাহরিনের পরিবার।
তাদের দাবি, যৌতুকের টাকা না পেয়ে শাশুড়ি, ননদ ও দেবর মিলে ঘরের মধ্যে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে পরিকল্পিতভাবে খুন করে আত্মহত্যা বলে প্রচার করেছে।
গত ৬ মে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক ফেরদৌস আরা বাদী নুরুল করিমের জবানবন্দি গ্রহণের পর পিটিশনটি সংশ্লিষ্ট থানাকে এফআইআর হিসেবে গ্রহণের পর মামলা তদন্তের জন্য পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো শাখাকে নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশে গত ৭ মে পাঁচলাইশ থানা ওই পিটিশনটি এফআইআর হিসেবে গণ্য করে মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে ঘটনার তদন্তের জন্য আদালতের অনুমোতি নিয়ে পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো শাখা আজ ( বৃহস্পতিবার ) নিহত গৃহবধু শাহরিনের লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.