মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের কোটা প্রশ্নে কিছু মানুষের উষ্মা প্রকাশ দু:খজনক: শিক্ষামন্ত্রী
মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের কোটা বরাদ্ধের প্রশ্নে কিছু মানুষের উষ্মা প্রকাশ খুবই দু:খজনক বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী।
শনিবার (৮ জুন ) চট্টগ্রামে এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেসিয়াম হলে বিভাগীয় কমিশনার ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভূমিসেবা সপ্তাহের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, মুক্তিযোদ্ধার প্রতি সম্মান দেখিয়ে তাদের সন্তানদের জন্য রাষ্ট্র কর্তৃক কোটার যে বিষয়টি ছিল, সেটা যথাযথ প্রতিপালনে অনেক জায়গায় অমনোযোগিতা ও অমান্য করা হচ্ছে। সে বিষয়ে উচ্চ আদালত থেকে একটি নির্দেশনা এসেছিল। সবাইকে অনুরোধ জানাব উচ্চ আদালতের রায়ের প্রতি ও নির্দেশনার প্রতি সবাই যথাযথভাবে সম্মান দেখাবেন।
তিনি বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে মুক্তিযুদ্ধের এত সময় পরে এসেও তাদের সন্তানদের জন্য রাখা কোটার প্রশ্নে কিছু মানুষের এত উষ্মা, তা খুবই দুঃখজনক। দেশ যারা স্বাধীন করে দিয়েছেন তাদের সন্তানদের দিয়ে তারা যদি দ্বিতীয়বার প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তাহলে এটা কোনোভাবে কাম্য নয়।
এ সময় কর্ণফুলী নদীতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্প নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিবেশ যাতে দূষণ না হয় সেজন্য শিল্পনগরী গড়ে দিয়েছেন। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় শিল্পনগরী বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরী। সেখানে বিশাল একটি এলাকার শিল্পায়ন এবং শিল্প সংশ্লিষ্ট কাজের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। সে হিসাবে আমি বলতে পারি, পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কোনো কাজ যাতে আমরা না করি।
তিনি বলেন, নদী যে ব্যবস্থাপনা এবং পানির যে বিশুদ্ধতা, দূষণমুক্ত রাখা এবং নদীর চলাচলের উপযুক্ত রাখা, এ বিষয়ে তো শুধু আমাদের নির্বাহী বিভাগ বা সরকার নয়, বিচার বিভাগ থেকেও সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা আছে। নদী রক্ষা করতে হবে। নদীর বহমান ধারা এবং সেটাকে বিশুদ্ধতা ডাকার প্রশ্নে সবাই ঐকমত্য আছে।
মন্ত্রী আরও বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্প নিয়ে আমি পুরোপুরি অবগত নই। তবে মধ্যবর্তী জায়গায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা হলে আমার যে সাধারণ দৃষ্টিতে সেটি কখনো কর্ণফুলী নদীর জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে না। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা পরিবেশ সংক্রান্ত ক্লিয়ারেন্স নিয়েছে কি না সেটা আমাদের দেখতে হবে। পরিবেশ অধিদপ্তরের ক্লিয়ারেন্স ছাড়া কোনো প্রকল্প করা, সেটা যথাযথ নয়। এ বিষয়ে আমি পরিবেশ মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কথা বলব।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলের পাকিস্তান নিয়ে বক্তব্য প্রসঙ্গে নওফেল বলেন, ‘এখনো কিছু রাজনৈতিক দল বলছে যে, পাকিস্তানের সময় নাকি ভালো ছিল। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব তিনি বলছেন, পাকিস্তানের সময় নাকি ভালো ছিল। তো কতটুকু পাকিস্তানপ্রেম দেশের বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে সেই দলে মহাসচিবের মধ্যে থাকতে পারে সেটা আপনারা দেখতে পাচ্ছেন।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক এবং দেশীয় কুচক্রীরা তাদের সহযোগিতা করার মাধ্যমে তারা রয়ে গেছেন। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের রাজনৈতিক সংগ্রাম। তারাই কিন্তু শিক্ষাব্যবস্থাকে ধর্মনিরপেক্ষ সম্প্রদায়িক চেতনা বিচ্যুত করে সেটাকে এক ধরনের সাম্প্রদায়িকীকরণে প্রচেষ্টা তারাও করে।
শিক্ষা কারিকুলামে সব ধর্মের প্রতি সম্মানের ভূমিকা শক্তিশালী থাকবে উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা সবসময় বলে এসেছি শিক্ষাব্যবস্থা, শিক্ষা প্রক্রিয়া, পাঠদান ব্যবস্থা ও পাঠক্রমের মধ্যে সবসময় সব ধর্মের প্রতি সম্মান এবং শ্রদ্ধার জায়গাটাতে আমরা সবসময় শক্তিশালী ভূমিকায় থাকব। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতি ইসলামের বিরুদ্ধে কোনো কাজ শেখ হাসিনা সরকার কখনো করেনি, আগামীতেও করবে না। কিছু কিছু বিষয় তারা বিতর্ক সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছেন সেগুলো অবশ্যই আমরা নিরসন করব।
এর আগে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার বদান্যতায় ও নির্দেশনায় ডিজিটাল বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছে। সেই ডিজিটাল বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রাপ্তি হচ্ছে ভূমি ব্যবস্থাপনায় ডিজিটালাইজেশন। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আগামী ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। স্মার্ট পদ্ধতিতে ভূমি সংক্রান্ত সকল সেবা দুর্নীতি ও হয়রানিমুক্তভাবে জনসাধারণের দোর গোড়ায় পৌঁছে দেয়া স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের একটি অন্যতম ক্ষেত্র।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ড.আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল আহমেদ, চট্টগ্রাম পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার ইয়াসমিন পারভীন তিবরীজি, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি সঞ্জয় সরকার সহ অন্যরা। চট্টগ্রামে ভূমিসেবা সপ্তাহে ১০টি স্টলের মাধ্যমে আগত সেবা প্রার্থীদের সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
শুরুতে বেলুন উড়িয়ে ও ফিতা কেটে সপ্তাহব্যাপী ভূমিসেবা সপ্তাহের উদ্বোধন ও শেষে মেলার স্টল পরিদর্শন করেন মন্ত্রী।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.