জুনে উৎপাদনে আসছে এস আলম গ্রুপের এসএস পাওয়ার

৬৬০

আগামী জুনের মধ্যে পুরোদমে উৎপাদনে আসছে বিদ্যুৎ সেক্টরে দেশের বেসরকারি পর্যায়ে নির্মিত সবচেয়ে বড় প্রকল্প এস আলম গ্রুপের ১৩শত ২০ মেগাওয়াট (এসএস পাওয়ার) বিদ্যুৎ কেন্দ্র। কয়লাভিত্তিক এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে উৎপাদন খরচেই ২৫ বছর বিদ্যুৎ কিনবে সরকার, কয়লার আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যে এই কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের ইউনিট প্রতি দাম পড়বে প্রায় ৯ টাকা।

রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পরিদর্শনকালে এসব কথা জানান, প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক ই ইলাহি চৌধুরী।

প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বাশঁখালীর গন্ডমারায় নির্মিত কয়লা ভিত্তিক এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণ শেষে উৎপাদনে যাওয়ার আগে জ্বালানী উপদেষ্ঠার নেতৃত্বে বিদ্যুৎ ও জ্বালানী সচিব সহ সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা পরিদর্শন এবং জুন থেকে পিক সময়ে দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে এস আলম গ্রুপের সাথে বৈঠক করেন তারা।

এস আলম গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ লাবু জানান, নব নির্মিত ১৩শ’ ২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুইটি টারবাইনে প্রতি ঘন্টায় কয়লা লাগবে ২৯০ মেট্রিকটন। প্রতি টারবাইনের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা (প্রতি ঘণ্টায়) ৬৬০ মেগাওয়াট।

আগামী ১৫ মার্চ প্রথম লটে ইন্দোনেশিয়া থেকে আনা হবে ২০ হাজার মেট্রিক টন এবং এরপরেই আসবে ২ লাখ মেট্রিক টন কয়লা। কয়লা আসবে অস্ট্রেলিয়া থেকেও। এজন্য ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ ভিড়বে জেটিতে, এজন্য ব্রেক ওয়াটার তৈরী করা হচ্ছে। কয়লা রাখার জন্য ১৯ লাখ মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন নির্মাণ করা হয়েছে ২টি রিজার্ভার।

এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র অপারেশনে গেলে ৪৫০ প্রকৌশলীসহ মোট ১২ থেকে ১৩শ’ জনের কর্মসংস্থান হবে। কমার্শিয়াল অপারেটিং ডেট (সিওডি) অনুসারে সরকারকে ৩১ মে থেকে অফিশিয়ালি বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে এই কেন্দ্র থেকে। এর আগে মার্চ থেকে পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হলে তখন ৫৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারবে বলে জানানো হয়।

এস আলম গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান আরো বলেন, সমুদ্র থেকে পানি নিয়ে ওয়াটার ট্রিটমেন্টে করে তারপর বয়লারে আনা হবে। কয়লার মাধ্যমে সৃষ্ট তাপ থেকে পানি বাস্প করে সেগুলো পাঠানো হবে টারবাইনে। টারবাইন ঘুরে জেনারেটরে যাবে। জেনারেটর থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। মাতারবাড়ি থেকে আসা বিদ্যুৎ এখানে সুইচিং হবে। ওখান থেকেও দুইটি ইউনিটে ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসবে। তারপর এখানের বিদ্যুৎসহ মদুনাঘাট বিদ্যুৎ কেন্দ্রে চলে যাবে। সেটা সরাসরি চলে যাবে জাতীয় গ্রিডে।

প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ ও জ্বালানী বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক ই ইলাহি চৌধুরী বলেন, কিছু প্রকল্প দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করে। ঠিক তেমনি এস এস পাওয়ার দেশের বেসরকারী পর্যায়ে সবচেয়ে বড় একটি প্রকল্প। এস এস পাওয়ার ও মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদনে গেলে সরকার ৩০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ দিতে পারবে।

তিনি সবাইকে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হবার আহবান জানিয়ে বলেছেন, সাশ্রয়ের কোনো বিকল্প নেই। সে সাথে এস এস পাওয়ার প্ল্যান্ট যত তাড়াতাড়ি বিদ্যুৎ দিতে পারবে, তত তাড়াতাড়ি দেশে লোডশেডিং কমে আসবে।

তৌফিক ই ইলাহী আরো বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে যদি জ্বালানির দাম সহনশীল হয়, যদি এলএনজির দাম সহনীয় হয়, কয়লার দাম সহনীয় হয়, তাহলে বাংলাদেশে বিদ্যুতের কোনো ঘাটতি থাকবে না। আমাদের ২৬ হাজার মেগাওয়াট ক্যাপাসিটি আছে, লাগবে ১৬ হাজার মেগাওয়াট। আজ ইউক্রেন- রাশিয়ার যুদ্ধের খেসারত আমাদের মতো দেশকে দিতে হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক দূরদর্শিতার সঙ্গে এই সংকট পার করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

উপদেষ্টা আরো বলেন, আমরা যাদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ নেব, সব দাম একইরকম হবে। একমাস আগে একরকম ছিল কয়লার দাম। একমাস পরে অন্যরকম। কিন্তু সব কয়লা প্রকল্পের বিদ্যুতের দাম সমান হবে। জ্বালানির দাম যা, তার হিসাব অনুসারে বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার যেদিন যে দাম, সেই হিসেবে বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ হবে।

দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপ ও চীনা প্রতিষ্ঠান সেপকো-এইচটিজি যৌথভাবে ‘এস এস পাওয়ার প্ল্যান্ট’ নির্মাণ করেছে। প্রায় ৬শত একর জায়গায় নির্মিত এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পরিবেশ দুষণ রোধে সর্বাধুনিক সুপারক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহার এবং ২শ৭৫ মিটার সুউচ্চ চিমনি স্থাপন করা হয়েছে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.