বঙ্গবন্ধু টানেলের কাজ ৮৫ ভাগ শেষ
কর্ণফুলী নদীর তলদেশে দেশের ইতিহাসে প্রথম টানেল নির্মাণকাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। এর নামকরণ করা হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টানেলের ৮৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ করতে চলছে তোড়জোড়।
কাজের অগ্রগতির বিষয়ে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক মো. হারুনুর রশিদ বলেন, ‘এ পর্যন্ত প্রকল্পটির সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৮৫ শতাংশ। এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। টানেলের কাজ শেষ হলে চীনের সাংহাইয়ের আদলে চট্টগ্রামে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে।’
প্রকল্প পরিচালক আরও বলেন, ‘এ টানেলের দুইটি টিউবের খনন কাজ আগেই শেষ হয়েছে। এখন টানেলের অভ্যন্তরের স্ট্রাকচারের কাজ চলছে। দুই টিউবের ক্রস প্যাসেজের কাজ চলছে। উচ্চমাত্রার ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের কথা চিন্তা করেই টানেলের ডিজাইন করা হয়েছে। টানেলের মুখে ফ্লাডগেটসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ডিজাইন অনুযায়ী। সুতরাং জলোচ্ছ্বাস হলেও টানেলের কোন ক্ষতি সাধন হবে না।’
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, প্রথম টিউবের পর দ্বিতীয় টিউবে রোড স্ল্যাব স্থাপন কাজও সমানতালে এগিয়ে চলেছে। পাশাপাশি চলছে দুইটি টিউবের মধ্যে ক্রস প্যাসেজ বা আন্তঃসংযোগের কাজ। টানেলের পতেঙ্গা অংশে সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজও এগিয়ে চলেছে। অনুরূপভাবে দক্ষিণ দিকে অর্থাৎ আনোয়ারা অংশে সংযোগ সড়কের নির্মাণ এগিয়ে নিচ্ছে সেতু বিভাগ।
কর্ণফুলীর দক্ষিণে আনোয়ারায় রয়েছে কোরিয়ান ইপিজেড, চায়না ইপিজেড, সিইউএফএল, পারকি সমুদ্র সৈকত। কর্ণফুলী পেরিয়ে আনোয়ারা হয়েই কক্সবাজার, বাঁশখালী ও মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র ও মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরে যেতে হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্পটি বাংলাদেশ ও চীন সরকারের (জি টু জি) যৌথ অর্থায়নে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে চার হাজার ৪৬১ কোটি ২৩ লাখ টাকা আর চীন সরকারের ঋণ পাঁচ হাজার ৯১৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা।
২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধনের পর টানেলের চট্টগ্রাম নগরের প্রান্তের কাজ শুরু হয় পতেঙ্গা নেভাল একাডেমির পাশ থেকে। এটি কাফকো ও সিইউএফএল সীমানার মাঝখান দিয়ে উঠে কর্ণফুলী-আনোয়ারা প্রান্তে সংযোগ ঘটাবে।
মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩১৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে টানেলের প্রতিটি টিউবের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার এবং ব্যাস ১০ দশমিক ৮০ মিটার। প্রতিটি টিউবে দুটি করে মোট চারটি লেন থাকবে। মূল টানেলের সঙ্গে নদীর দুই প্রান্তে মোট ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযুক্ত সড়ক থাকবে। এছাড়াও ৭২৭ মিটার দীর্ঘ একটি ফ্লাইওভার থাকবে আনোয়ারা অংশে।
এদিকে, ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। টানেল নির্মাণ কাজ শেষ হলে কর্ণফুলী নদীর আনোয়ারা অংশে অর্থাৎ দক্ষিণ চট্টগ্রামে নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণে আসবে বিদেশি বিনিয়োগ।
বিজিএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘চট্টগ্রামে যে টানেল হচ্ছে, তা দক্ষিণ চট্টগ্রামকে কাজে লাগাতে ভালো ভূমিকা রাখবে। দক্ষিণ চট্টগ্রামের অনেক জায়গায় শিল্প কারখানা করা যাবে। টানেল ব্যবহারে চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হবে। টানেলের ফলে অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ উপকৃত হবে।’
তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ চট্টগ্রাম, চকরিয়াসহ কক্সবাজার অঞ্চলে অনেক জায়গা পড়ে আছে। টানেলের কারণে এসব জায়গায় বিদেশিরা বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাবে। বিদেশি বিনিয়োগ এলে দেশ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে। তবে টানেলের সঙ্গে সঙ্গে নদীর দক্ষিণ পাড়ে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ দ্রুত গড়ে তুলতে হবে।’
টানেল নির্মাণের জন্য চাইনিজ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিসিসিসি লিমিটেড ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের মধ্যে ২০১৫ সালের ৩০ জুন বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। পরে বাংলাদেশ সরকার (অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ) ও চীন সরকারের (দ্য এক্সিম ব্যাংক অব চায়না) মধ্যে ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর ঋণ চুক্তি সই হয়। ২০১৭ সালের ৬ নভেম্বর ঋণ চুক্তি কার্যকর হয়। পরে ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী ‘টানেলের নির্মাণ’ কাজের উদ্বোধন করেন।
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ নির্মাণের দায়িত্বে থাকা চীনা কোম্পানিকেই এর রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ১৮ মে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় এ কাজের জন্য চায়না কমিউনিকেশন্স কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডকে (সিসিসিসি) এ দায়িত্ব দেওয়ার প্রস্তাব নীতিগতভাবে অনুমোদন পায়। খবর ঢাকা পোস্টের
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.