তাজমহল খুলে দেয়া হলো দর্শনার্থীদের জন্য

৬৯৭

করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ কমতে শুরু করায় পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হলো ভারতের আগ্রার বিখ্যাত মোঘল স্থাপনা তাজমহল। করোনায় বিপর্যস্ত অর্থনীতির চাকা গতিশীল করতে বিধি-নিষেধ শিথিল করে বুধবার খুলে দেওয়া হয়েছে ঐতিহাসিক এই পর্যটন স্থাপনা।

সতের শ’ শতাব্দিতে মোঘল শাসক শাহ জাহানের নির্মিত আগ্রার ঐতিহাসিক স্থাপনা তাজমহলের দ্বার পর্যটকদের জন্য বন্ধ হয়ে যায় গত এপ্রিলে। প্রত্যেকদিন হাজারও মানুষের প্রাণ কেড়ে নেওয়া করোনাভাইরাসের বিস্তারের লাগাম টানতে সেই সময় কঠোর লকডাউন জারি হলে বন্ধ করে দেওয়া হয় তাজমহল।

বুধবার আগ্রার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট প্রভু সিং বলেছেন, আজ থেকে দিনের যেকোনও সময় তাজমহলের চত্বরে মাত্র ৬৫০ জন পর্যটক প্রবেশের অনুমতি পাবেন।

শ্বেত মার্বেল পাথরের ঐতিহ্যবাহী এই স্থাপনা দর্শনে প্রত্যেক বছর ৭০ থেকে ৮০ লাখ পর্যটক আগ্রায় যান। পর্যটকদের তাজমহল দর্শনের এই সংখ্যা দৈনিক গড়ে প্রায় ২০ হাজার। তাজমহলের পাশাপাশি মিনার, স্মৃতিসৌধ ও যাদুঘরও দর্শনার্থীদের খুলে দেওয়া হয়েছে দেশটিতে।

করোনাভাইরাসের পূর্ব-সতর্কতা হিসেবে দর্শনার্থীরা তাজমহলে প্রবেশের অনুমতি পেলেও চকচকে মার্বেল পাথরের সমাধি স্পর্শ করতে পারবেন না। তারপরও বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের অন্যতম এই স্থাপনা দেখতে পেয়ে খুশি পর্যটকরা। ৪০ বছর বয়সী ব্রাজিলীয় পর্যটক মেলিসা ডালা রোসা বলেন, ‘আমি এটি দেখতে পেয়ে খুবই আনন্দিত। এটি অত্যন্ত চমৎকার।

ফরাসী বার্তাসংস্থা এএফপিকে তিনি বলেন, ‌‘আমি যখন প্রথম এটি দেখলাম তখন কেঁদেছিলাম। (এটি ছিল) এক ধরনের বিশেষ অভিজ্ঞতা।’

তাজমহলের ওপর নির্ভর করে যারা জীবিকা নির্বাহ করেন তাদের একজন সেখানকার দোকানদার লাকি ফেইজান (২০)। তিনি বলেন, লকডাউন এখানকার দোকানিদের জীবিকার ওপর কঠোরভাবে চেপে বসেছিল। এটা করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ছিল। তৃতীয় ঢেউ এলে আমি শেষ হয়ে যাবো।
ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় উত্তরপ্রদেশের আগ্রায় স্থাপিত তাজমহল। এই প্রদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনা সংক্রমিত হয়েছেন ২৭০ জন এবং মারা গেছেন ৫৬ জন। করোনায় সংক্রমণের মোট হিসেবে দেশটির যে কয়েকটি রাজ্য বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছিল উত্তরপ্রদেশ সেসবের অন্যতম।

আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার আগ্রার কর্মকর্তা বসন্ত কুমার স্বর্ণকার বলেন, ‘তাজমহল প্রত্যেকদিন অন্তত ৩ বার স্যানিটাইজ করা হবে। পর্যটকদের বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরতে হবে। সেখানে প্রবেশের আগে প্রত্যেকের শরীরের তাপমাত্রা মেপে দেখা হবে।’

সংক্রমণ কমে আসায় ধীরে ধীরে সবকিছু খুলতে শুরু করেছে ভারতে। শপিং মল, সিনেমা হল, পর্যটন কেন্দ্রসহ অন্যান্য সব প্রতিষ্ঠান পুনরায় খুলতে শুরু করায় দেশটির রাজধানী নয়াদিল্লিসহ বিভিন্ন শহরে প্রত্যেকদিন তীব্র যানজট দেখা যাচ্ছে। স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করার এই প্রক্রিয়ায় আবারও করোনার বিস্ফোরণ ঘটতে পারে বলে দেশটির স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়েছেন।

ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, বুধবারও দেশটিতে ৬২ হাজার ২২৪ জন নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন; যা আগের দিনের তুলনায় কিছুটা কম। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে মারা গেছেন ২ হাজার ৫৪২ জন।

দেশটিতে গত মে মাসে দৈনিক সংক্রমণ সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছায়। সেসময় দেশটিতে প্রত্যেকদিন তিন থেকে চার লাখ মানুষের করোনা শনাক্ত হয়। দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২ কোটি ৯০ লাখের বেশি মানুষ এবং মারা গেছেন ৩ লাখ ৭৯ হাজার ৫৭৩ জন।

 

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.