অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে শেষ ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ

২৮৯

বাংলাদেশের বোলিংতোপে সিরিজের শেষ ম্যাচে মাত্র ৬২ রানে অলআউট হয়েছে সফরকারী অস্ট্রেলিয়া। ৬২ রানের এই জয়ের ফলে ৫ ম্যাচের সিরিজ ৪-১ ব্যবধানে নিজেদের করে নিল বাংলাদেশ।

আজ সোমবার (৯ আগস্ট) মিরপুর শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশের অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।

নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১২২ রান করে স্বাগতিকরা। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ২৩ রান করেন নাঈম শেখ। এছাড়া মাহমুদউল্লাহ ১৯, সৌম্য ১৬, মেহেদী ১৩ রান করেন।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চলতি সিরিজ নিজেদের পকেটে পুড়তে পারলেও উদ্বোধনী জুটিতে রানখরা বেশ ভাবাচ্ছিল দলকে। টানা চার ম্যাচে বাজে ব্যাটিং করা সৌম্য সরকার শেষ ম্যাচে একাদশে ছিলেন ঠিকই, তবে ওপেন করতে আসেননি। মোহাম্মদ নাঈমের সঙ্গে ওপেন করেন মেহেদী হাসান। মুখোমুখি হওয়া দ্বিতীয় বলে অ্যাশটন টার্নারকে সুইপ করে চারও হাঁকান তিনি। প্রথম ওভারে বাংলাদেশ সংগ্রহ করে ৮ রান।

প্রথম ওভারের পর দ্বিতীয় ওভারেও দারুণ খেলে দুই ওপেনার। টার্নের দেখা মিলেছে প্রথম থেকেই, তবে অ্যাশটন অ্যাগারের স্লটে পাওয়া বলে স্লগ সুইপে কাউ কর্নার দিয়ে ছয় মেরেছেন মোহাম্মদ নাঈম। দ্বিতীয় ওভারে উঠেছে ১১ রান।

টার্নার, অ্যাগারের পর তৃতীয় ওভার করেন আরেক বিশ্বস্ত স্পিনার অ্যাডাম জাম্পা। তবে এদিন প্রথম ওভার করতে এসে তিনিও দিয়েছেন ১৪ রান। ৩ ওভার শেষে বাংলাদেশের স্কোর গিয়ে দাঁড়ায় ৩৩ রানে। এদিন সিরিজের সর্বোচ্চ ওপেনিং রানের জুটি হয়ে যায় বাংলাদেশের।

অবশ্য প্রথম দুই ওভারের দুই স্পিনারই ফিরিয়ে এনেছে একটা স্মৃতি। এ নিয়ে মাত্র দ্বিতীয়বার দুই প্রান্তে দুই স্পিনারকে দিয়ে বোলিং শুরু করেছে অস্ট্রেলিয়া। এর আগে ২০১৪ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে বোলিং ওপেন করেছিলেন ব্র্যাড হজ ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। সে ম্যাচটিও ছিল মিরপুরেই।

৫ম ওভারে বল করতে এসে অ্যাশটন টার্নার লাইন খুঁজে পেতেই হিমশিম খাচ্ছিলেন, একে একে তিনটি ওয়াইড দেন। তবে ক্রিজে থেমে আসা বলেই পেলেন সাফল্য। আগেভাগেই শট খেলে ফেলেছিলেন মেহেদী, ব্যাটও ছুটে গিয়েছিল হাত থেকে। তবে এর আগেই উঠেছে ক্যাচ। মিড-অনে শুধু দাঁড়িয়ে থেকেই ক্যাচটা নিয়েছেন অ্যাগার। বাংলাদেশ প্রথম উইকেট হারিয়েছে ৪২ রানে। মেহেদী ফিরেছেন ১২ বলে ১৩ রান করে।

৭.২ ওভারে ফিফটি পূর্ণ হয়েছে বাংলাদেশের। এলিসের করা পাওয়ার প্লের শেষ ওভার থেকেই কমেছে রানের গতি। শেষ ৩ ওভারে উঠেছে ১৩ রান, এর মাঝে ৭ রানই এসেছে আগের ম্যাচের সেরা মিচেল সোয়েপসনের করা প্রথম ওভারে।

৮ম ওভারে এসে দ্বিতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ। পেসের বৈচিত্র যেন সহ্যই করতে পারলেন না নাঈম। ড্যান ক্রিস্টিয়ানকে করতে গেলেন রিভার্স সুইপ, তবে কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না সে শটে। ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ধরা পড়ার আগে নাঈম করেছেন সমানসংখ্যক বলে ২৩ রান, যিনি আগের ৪ ইনিংসে করেছিলেন ৩০, ৯, ১ ও ২৮ রান। ৫৭ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

এদিকে, সাকিব ভুগছিলেন শুরু থেকেই। উইকেটের গতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার আগেই সাজঘরে ফিরলেন তিনিও। অ্যাডাম জাম্পার ফুললেংথের বলটা ফ্লিক করতে গিয়ে মিস করেছেন সাকিব, আম্পায়ার তানভীর আহমেদের সিদ্ধান্ত রিভিউ করারও প্রয়োজন বোধ করেননি তিনি। সাকিব ফিরেছেন ২০ বলে ১১ রান করে, ৬০ রানে ৩য় উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

নাঈম-সাকিবের পর সাজঘরে ফেরেন দলের কাপ্তান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও। অ্যাশটন অ্যাগারের বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে বোলারের হাতেই সহজ ক্যাচ তুলে দেন। এত সহজ ক্যাচ তালুবন্দি করতে মোটেও বেগ পেতে হয়নি অ্যাগারকে। আউট হওয়ার আগে ১৪ বলে ১৯ রান সংগ্রহ করেন টিম টাইগার্স ক্যাপ্টেন।

এদিকে, টানা চার ম্যাচে ব্যর্থ সৌম্য শেষ ম্যাচে পজিশন পরিবর্তন করেও বেশি ভালো খেলতে পারলেন না। যদিও ধীরে ধীরে জ্বলে ওঠারই ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু ড্যান ক্রিশ্চিয়ানের বলে টার্নারের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি। তার আগে ১৮ বলে ১৬ রান করেন সৌম্য। সিরিজে এটিই সৌম্যর সর্বোচ্চ স্কোর, এর আগের চার ইনিংসে করেছিলেন ২, ০, ২ ও ৮ রান। ৯৬ রানে ৫ম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

পাঁচ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর আফিফের সাথে দলের হাল ধরেন নুরুল হাসান সোহান। তবে বেশিক্ষণ সঙ্গ দিতে পারেননি তিনিও। পুরো ইনিংসজুড়েই দুর্দান্ত বল করা নাথান এলিসের অবিশ্বাস্য এক ডেলিভারিতে বোল্ড হন সোহান। তার আগে ১৩ বলে মাত্র ৮ রান যোগ করতে পারেন দলের খাতায়।

ঝিমানো শুরুর পর আফিফও ফেরেন মাত্র ১০ রান করে। এরপর হতাশ করেছেন সাইফুদ্দিনও। শেষ পর্যন্ত ৮ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ সংগ্রহ করে মাত্র ১২২ রান।

জবাব দিতে নেমে ১৩.৪ ওভারে মাত্র ৬০ রানে অলআউট হয় অজিরা। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে অধিনায়ক ম্যাথু ওয়েড সর্বোচ্চ ২২ এবং বেন ম্যাকডারমট করেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৭ রান। এছাড়া অজিদের আর কোনো ব্যাটার দুই অংকের ঘর স্পর্শ করতে পারেননি। টাইগারদের হয়ে সাকিব আল হাসান ৩.৪ ওভারে মাত্র ৯ রান দিয়ে ৪ উইকেট শিকার করেন। এছাড়া এই সিরিজে প্রথম খেলতে নামা সাইফুদ্দিন ৩টি, নাসুম ২টি ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ নেন ১টি উইকেট। সূত্র: সময় নিউজ।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.