জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়া খালাস: আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া ১০ বছরের কারাদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আপিল মঞ্জুর করে খালাসের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেছে আপিল বিভাগ।
বুধবার (৫ নভেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ৫৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশ করা হয়। রায়টি লিখেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ সর্বসম্মতিক্রমে রায়টি দেন।
আদালতে আপিলের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, বদরুদ্দোজা বাদল, রুহুল কুদ্দুস কাজল ও কায়সার কামাল। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী জাকির হোসেন ভুঁইয়া ও মাকসুদ উল্লাহ। কাজী সালিমুল হক কামালের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদুর রউফ ও অনীক আর হক। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আসিফ হাসান।
রায় ঘোষণার পর জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, “যে মামলায় কিছুই ছিল না, সেই মামলায় হাইকোর্ট পাঁচ বছর থেকে সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করে। এটা ছিল খুবই দুঃখজনক। আজকের রায়ে প্রমাণ হয়েছে, বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করছে।”
রায়ে আদালত বলেছেন, “আপিল ইজ অ্যালাউ।” অর্থাৎ আপিল মঞ্জুর করে বিচারিক আদালত ও হাইকোর্ট বিভাগের দেওয়া রায় বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। একইসঙ্গে যারা আপিল করতে পারেননি—তাদেরও খালাস দেওয়া হয়েছে। আদালত মন্তব্য করেছেন, এটি ছিল “ম্যালিসাস প্রসিকিউশন”—অর্থাৎ বিদ্বেষমূলক ও প্রতিহিংসামূলক মামলা।
দুদকের আইনজীবী আসিফ হাসান জানান, মোট চারটি আপিল মঞ্জুর করেছেন আপিল বিভাগ। তিনি বলেন, “পুরো মামলাটিকে আদালত বিদ্বেষপূর্ণ কার্যধারা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাই যারা আপিল করতে পারেননি, যেমন তারেক রহমান ও কামাল সিদ্দিকী, তারাও খালাস পেয়েছেন।”
এর আগে, গত বছরের ১১ নভেম্বর আপিল বিভাগ খালেদা জিয়াকে আপিলের অনুমতি দিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া সাজার রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করেছিলেন।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মো. আখতারুজ্জামান অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন। একই মামলায় তাঁর ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেন আদালত।
পরে ওই বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া হাইকোর্টে আপিল করেন। কিন্তু ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর হাইকোর্ট তাঁর সাজা পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করে দেয়।
অবশেষে, দীর্ঘ সাত বছর পর দেশের সর্বোচ্চ আদালত বিএনপি চেয়ারপারসনসহ মামলার সব আসামিকে খালাস দেন।
সংগৃহীত ছবি
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.