চমেকে ডাক্তারদের দ্বিতীয় দফায় কর্মবিরতি, ভোগান্তিতে রোগীরা

দেশব্যাপী ইন্টার্ন চিকিৎসকদের চলমান দ্বিতীয় দফায় কর্মবিরতির কারণে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা সেবা বন্ধ হয়ে গেছে। এতে, বিপাকে পড়েছেন দূরদূরান্ত থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা। বহির্বিভাগের সামনে অপেক্ষমাণ রোগীদের অভিযোগ, বুধবার (১২ মার্চ) সকাল ৯ টা থেকে কাউন্টারে টিকিট বিক্রি করা হলে সাড়ে ১০ টার দিকে বন্ধ করে দেয়া হয়। অনেকে টিকেট কেটেও দেখাতে পারছেন না ডাক্তার।

চট্টগ্রামের আনোয়ারা থেকে বৃদ্ধ মাকে নিয়ে মেডিকেলে রোগীর এক স্বজন জানান, সকাল ৯ টায় এসে টিকেট নিয়েছি, এখনো ডাক্তার দেখাতে পারিনি। আজকে ডাক্তার দেখাতে পারবো কিনা জানি না। এরকম হবে জানলে এত কষ্ট করে রোজার দিনে মাকে নিয়ে এখানে আসতাম না।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) শিক্ষার্থী ফারহান হোসেন বলেন, ‘আমরা দিনের পর দিন ক্লাস-পরীক্ষা বাদ দিয়ে আন্দোলন করছি। কিন্তু এখনো আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হয়নি। আমরা চিকিৎসকদের পেশাগত মর্যাদা রক্ষার জন্য এই লড়াই চালিয়ে যাব। যদি আমাদের কথা না শোনা হয়, তাহলে আমরা আরও কঠোর কর্মসূচিতে যাব।’

আরেক ইন্টার্ন চিকিৎসক বলেন, ‘শুধু আশ্বাস দিয়ে আমাদের দাবিগুলো উপেক্ষা করা হচ্ছে। আমরা এমন একটি সিদ্ধান্ত চাই, যাতে ভবিষ্যতে আর এই ধরনের অনিশ্চয়তার মুখে পড়তে না হয়। স্বাস্থ্য খাতের শৃঙ্খলা ফেরানো ও রোগীদের যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করতেই আমরা এই আন্দোলন করছি।’

চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার তসলিম উদ্দিন বলেন, “ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কর্মবিরতিতে থাকায় বিভিন্ন ওয়ার্ডে সেবা দিচ্ছেন হাসপাতালের সিনিয়র ও জুনিয়র ডাক্তাররা। এতে চিকিৎসক সংকট দেখা দেয়ায় ব্যাহত হচ্ছে বহির্বিভাগের সেবা। তিনি বলেন, হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা সেবা স্বাভাবিক আছে।

প্রসঙ্গত;  ২০১৩ সালে ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল ফ্যাকাল্টি (ডিএমএফ) ডিগ্রিধারী সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারদের (স্যাকমো) কয়েকজন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) আইনের কয়েকটি ধারা চ্যালেঞ্জ করে ‘ডাক্তার’ পদবি ব্যবহারের অনুমতির জন্য আদালতে রিট দায়ের করেন। ওই বছরের ৩০ এপ্রিল এই রিটের প্রথম শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এরপর রিটটি ৬৭ বার কজ লিস্টে এলেও ব্যাখ্যাহীন কারণে এ বিষয়ে কোনো শুনানি হয়নি। দীর্ঘ আইনি জটিলতার পর, গত বছরের (২০২৪ সালে) ২৫ ফেব্রুয়ারি রিটের ৯১তম শুনানি অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে আদালত রায় ঘোষণার জন্য আজকের দিন ধার্য করেন। তারপর থেকে টানা আন্দোলনে নামে চিকিৎসকসহ মেডিকেলের শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনরত চিকিৎসকরা বলছেন, জনসাধারণকে অপচিকিৎসার হাত থেকে রক্ষা করা, স্বাস্থ্যখাতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং চিকিৎসা পেশার মর্যাদা রক্ষায় পাঁচ দফা দাবির বাস্তবায়ন জরুরি। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ‘আমলাতান্ত্রিক কূটকৌশলের’ প্রতিবাদে তারা কঠোর কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন।

এদিকে দুপুর ১২ টার দিকেও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ একাডেমি ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেছেন আন্দোলনরত ইন্টার্ন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.