হেফাজতের নতুন কমিটিতেও বাবুনগরী

৫৩,১৬২

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের ৩৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে রাখা হয়নি মামুনুল হকসহ বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার হওয়া হেফাজত নেতাদের। নতুন কমিটিতেও আমির করা হয়েছে জুনাইদ বাবুনগরীকে। ৯ জন হয়েছেন নায়েবে আমির। মহাসচিব করা হয়েছে মাওলানা হাফেজ নূরুল ইসলামকে।

সোমবার (৭জুন) রাজধানীর খিলগাঁওয়ে মাখজানুল উলুম মাদরাসায় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন এ কমিটি ঘোষণা করা হয়।

৩৩ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটির আমির জুনাইদ বাবুনগরী। মহাসচিব মাওলানা হাফেজ নূরুল ইসলাম জেহাদি। নায়েবে আমির ৯ জন। তারা হলেন- আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, মাওলানা আবদুল হক, মোমেনশাহী, মাওলানা সালাহউদ্দীন নানুপুরী, অধ্যক্ষ মীযানুর রহমান চৌধুরী (পীর দেওনা), মাওলানা মুহিব্বুল হক (গাছবাড়ী, সিলেট), মাওলানা ইয়াহইয়া, (হাটহাজারী মাদরাসা), মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস (ফরিদাবাদ মাদরাসা), মাওলানা তাজুল ইসলাম (পীর সাহেব ফিরোজ শাহ্), মাওলানা মুফতি জসিমুদ্দীন (হাটহাজারী মাদরাসা)।

যুগ্ম মহাসচিব ৫ জন। তারা হলেন- মাওলানা সাজেদুর রহমান (ব্রাহ্মণবাড়িয়া), মাওলানা আব্দুল আউয়াল (নারায়নগঞ্জ), মাওলানা লোকমান হাকীম (চট্টগ্রাম), মাওলানা আনোয়ারুল করীম (যশোর),মাওলানা আইয়ুব বাবুনগরী।

সহকারী মহাসচিব ২ জন- হযরত মাওলানা জহুরুল ইসলাম (মাখজান), মাওলানা ইউসুফ মাদানী (আল্লামা শাহ আহমদ শফির ছেলে)।

সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মীর ইদ্রিস (চট্টগ্রাম)। অর্থ সম্পাদক মাওলানা মুফতি মুহাম্মদ আলী (মেখল), সহ-অর্থ সম্পাদক মুফতি হাবিবুর রহমান কাসেমী (নাজিরহাট), প্রচার সম্পাদক মাওলানা মুহিউদ্দীন রব্বানী (সাভার), সহ- প্রচার সম্পাদক মাওলানা জামাল উদ্দীন (কুড়িগ্রাম), দাওয়া বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা আবদুল কাইয়ুম সোবহানী (ঢাকা), সহকারী দাওয়া সম্পাদক মাওলানা ওমর ফরুক (নোয়াখালী)।

কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন- মাওলানা মোবারাকুল্লাহ (ব্রাহ্মণবাড়িয়া), মাওলানা ফয়জুল্লাহ্ (পীর, মাদানীনগর), মাওলানা ফোরকানুল্লাহ খলিল (দারুল মা’আরেফ, চট্টগ্রাম) মাওলানা মোশতাক আহমদ (খুলনা দারুল উলূম), মাওলানা রশিদ আহমদ (কিশোরগঞ্জ), মাওলানা আনাস (ভোলা), মাওলানা মাহমুদল হাসান (ফতেহপুরী),মাওলানা মাহমুদুল আলম (পঞ্চগড়)।

সংবাদ সম্মেলনে নূরুল ইসলাম জেহাদী বলেন, ভবিষ্যতে প্রত্যেক জেলা কমিটির সভাপতি পদাধিকার বলে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে বিবেচিত হবেন। এ ছাড়া জেলা কমিটির সভাপতি ও সম্পাদককে অরাজনৈতিক ব্যক্তি হতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতে ইসলামের ৯ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় একটি খাস কমিটিও ঘোষণা করা হয়। সংগঠনের মহাসচিব নূরুল ইসলাম জেহাদী বলেন, হেফাজতের এই খাস কমিটি “মজলিসে শুরা” হিসাবে বিবেচিত হবে। এ ছাড়া তাঁরা হেফাজতের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে বিবেচিত হবেন, যারা সংগঠনের যে কোনো বিষয়ে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।

ওই খাস কমিটিতে রয়েছেন, মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, জুনাইদ বাবুনগরী, আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, নূরুল ইসলাম, মিযানুর রহমান চৌধুরী (পীর সাহেব দেওনা), সাজেদুর রহমান, (ব্রাহ্মণবাড়িয়া), আল্লামা মুহিব্বুল হক (গাছবাড়ী, সিলেট), আব্দুল আউয়াল (নারায়ণগঞ্জ), মুহিউদ্দীন রব্বানী (সাভার ঢাকা)।

এ ছাড়াও হেফাজতের ১৬ সদস্য বিশিষ্ট উপদেষ্টা কমিটিও ঘোষণা করা হয়। এ কমিটির সদস্যরা হলেন- মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, মুফতি আব্দুস সালাম (চাটগামী), সুলতান যওক নদভী, আব্দুল হালীম বোখারী (পটিয়া), নুরুল ইসলাম আদীব (ফেনী), আব্দুল মালেক হালীম, আব্দুর রহমান হাফেজ্জী (মোমেনশাহী), রশিদুর রহমান ফারুক বর্ণভী, নূরুল হক বটগ্রাম (কুমিল্লা), আবুল কালাম (মুহাম্মদপুর), শিব্বির আহমাদ (নোয়াখালী), জালাল আহমাদ (ভূজপুর), আল্লামা আশেক এলাহী (উজানী), হাবিবুল্লাহ বাবুনগরী, আব্দুল বাছীর (সুনামগঞ্জ), আফজালুর রহমান (ফেনী)।

কেন গত কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে- সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে জানতে চাইলে নুরুল ইসলাম বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমির বাবুনগরী সাহেব ওলামায়ে কেরামদের সঙ্গে আলোচনা করে কমিটি বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত নেন।

যারা কারাগারে আছেন, তাদের অপরাধী মনে করে বাদ দেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে, নবনির্বাচিত কমিটির মহাসচিব বলেন, কাউকে অপরাধী মনে করার ক্ষমতা আমাদের নেই। অপরাধী মনে করতে পারেন আদালত।

হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা আমির আহমদ শফীর বড় ছেলে ইউসুফ মাদানী আপনাদের কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে জানিয়েছেন, এই কমিটি মানেন না। এ বিষয়ে কী বলবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে নুরুল ইসলাম বলেন, আমাদের সঙ্গে তার যে কথা হয়েছে, তিনি কমিটিতে থাকার কথা জানিয়েছেন। তিনি কমিটি মানেন না বলে যদি কোনো কথা বলে থাকেন, সেটা সাংবাদিকদের কাছে বলেছেন। আমাদের এ রকম কিছু বলেননি।

হেফাজতের শফীপন্থিদের সঙ্গে বিভাজন দূর হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে নুরুল ইসলাম বলেন, হেফাজতে ইসলাম একটি। অন্য কোনো হেফাজত নেই। আর বিদ্রোহের কোনো খবর আমাদের কাছে নেই।

কমিটি গঠন করে কতটা খুশি? জানতে চাইলে নুরুল ইসলাম বলেন, কমিটি গঠন করে আমরা খুশি। তবে শঙ্কা হলো, যে দায়িত্ব আমাদের ওপর এসেছে তা কতটুকু পালন করতে পারব, সেটা নিয়ে।

প্রসঙ্গত, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ আগমনকে কেন্দ্র করে গত মার্চের ২৫, ২৬ ও ২৭ তারিখ দেশজুড়ে যে সহিংস ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ১৭ জন মানুষের প্রাণহানি হয়। এসব নাশকতার পেছনে জড়িত থাকার অভিযোগে অন্তত এক ডজন হেফাজত নেতা গ্রেফতার রয়েছেন।

এর মধ্যে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে রয়্যাল রিসোর্টে নারীসহ জনতার হাতে ধরা পড়েন। এতে নতুন করে বিতর্কের মুখে পড়ে হেফাজত।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.